Thursday 26 January 2023

হজরত মাওলানা হাবিবউল্লাহ (র) ভিতর গ্রামি জীবনী

 বৃহত্তর সিলেটের প্রবীণ আলেমেদ্বীন ,দারুল হাদীস মদীনাতুল উলুম খরিলহাট জৈন্তাপুর এর দীর্ঘদিনের মুহতামিম ও জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম সিলেট জেলার সাবেক সভাপতি হযরত মাওলানা শায়খ হাবিবুল্লাহ (ভিতরগ্রামী হুজুর) এর দাফনসম্পন্ন হয়েছে। সোমবার বেলা ২ ঘটিকার সময় জৈন্তাপুরস্থ খরিলহাট মাদ্রাসা ময়দানে তার নামাজে যানাযা অনুষ্ঠিত হয়। জানাযায় ইমামতি করেন,মরহুমের ০৬. ষষ্ঠ  ছেলে স্বেচ্ছাসেবক জমিয়তের কেন্দ্রীয় সেক্রেটারী মাওলানা ছফিউল্লাহ মাসুদ হাবিব। জানাযারপুর্বে সমবেত জনতার উদ্দেশে সংক্ষিপ্ত রাখেন, সিলেট জেলা জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের সভাপতি মাওলানা শায়খ জিয়াউদ্দীন, দরগাহ মাদ্রাসার শায়খুল হাদীস মুফতি মুহিব্বুল হক গাছবাড়ী,জমিয়তের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিকসম্পাদক মাওলানা উবায়দুল্লাহ ফারুক, কাজির বাজার মাদ্রাসার শায়খুল হাদীস মাওলানা আহমদ আলী শায়খে চিল্লা, দারুলউলুম কানাইঘাট মাদ্রাসার শিক্ষাসচিব মাওলানা শামসুদ্দিন,শায়খুল হাদীস শফিকুল হক সুরাইঘাটি, সুবহানীঘাট মাদ্রাসার মুহতামিম মাওলানা শফিকুল হক আমকুনী প্রমুখ।পরে খরিলহাট মাদ্রাসা সংলগ্ন কবরস্থানে তাকে অন্তিম শয়ানে সমাহিত করাহয়। জানাযায় সিলেটের র্শীষস্থানীয় আলেম উলামা ,বিভিন্ন জেলা অ উপজেলার সর্বস্তরের মুসলমান ও রাজনৈতিক, সামাজিক ব্যক্তিবর্গ সহ বিপুল সংখ্যক মুসল্লী উপস্থিত ছিলেন। উল্লেখ্য যে,

০৩ মার্চ ২০১৪ ইংরেজি  

 রোজঃ সোমবার রাত  ১২ঃ০৫ মিনিটের টার সময় সিলেট নগরীর শিবগঞ্জস্থ খরাদি পাড়া নিজ,  ০৬ নং ছেলে মাওলানা মাসুদ সাহেব এর বাসায় তিনি শেষ নি:শাষ ত্যাগকরেন। ইন্নালিল্লাহি ওয়াইন্নাইলাইহি রাজিউন।

 স্ত্রী, ৭ ছেলে ২ মেয়েসহ  অসংখ্য  আত্মীয় স্বজন  ভক্ত-ছাত্র রেখেগেছেন। মৃত্যকালে তার বয়স হয়েছিল ৯৭ বছর।মাওলানা শায়খ হাবিবুল্লাহ সিলেট জেলার জৈন্তাপুর উপজেলার দরবস্ত ইউনিয়নের  ভিতরগ্রামে এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। বিশ্ববিখ্যাত ইসলামী বিদ্যাপীঠ ভারতের দারুল উলুম দেওবন্দ মাদ্রাসা থেকে তিনি সর্বোচ্চ ডিগ্রী অর্জনকরেন। শায়খুল ইসলাম আল্লামা হোসাইন আহমদ মাদানীর সরাসরি ছাত্র ছিলেন। কর্মজীবনে জৈন্তাপুর উপজেলার দারুল হাদীস মদীনাতুল উলুম খরিলহাট মাদ্রাসার প্রথমে শিক্ষাসচিব পরবর্তীতে মুহতামীমের দায়িত্ব পালনকরেন। ইসলামী আন্দোলনে তিনি জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের সাথে সম্পৃক্ত ছিলেন। সিলেট জেলা জমিয়তের সভাপতি ও কেন্দ্রীয় জমিয়তের সদস্য ছিলেন। ছাত্র জীবনে তিনি দারুল উলুম দেওবন্দে ছাত্র জমিয়তের সংগঠনের নেতৃত্বদেন। আধ্যাতিক ময়দানে খলিফায়ে মাদানী আব্দুল মতিন শায়খে ফুলবাড়ী (র)এর নিকট থেকে তিনি খেলাফত প্রাপ্তহন। তিনি আলেম সমাজে যাঈমুল ক্বওম বলে পরিচিত ছিলেন। মরহুমের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন, এলাকার  সকল মুসলিম ও অমুসলিম এবং জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের সভাপতি খলিফায়ে মাদানী আল্লামা আব্দুল মোমিন শায়খে ইমামবাড়ী,ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব সাবেক এমপি মাওলানা শাহীনুর পাশা চৌধুরী,সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা উবায়দুল্লাহ ফারুক,সিলেট জেলা জমিয়তের সভাপতি মাওলানা শায়খ জিয়াউদ্দীন, কানাইঘাট জমিয়তের সভাপতি মাওলানা শিহাবুদ্দিন শায়খে রেংগা,মাদানী কাফেলার সভাপতি মাওলানা রুহুল আমীন নগরী, কানাইঘাট উপজেলা জমিয়তের সেক্রেটারী মুফতি ইবাদুর রহমান প্রমুখ।

 

Wednesday 9 March 2016

H M Habib Ullah (R)


যাঈমুল ক্বওম মাওলানা হাবিব উল্লাহ রহ.

॥ শাহিদ আহমদ হাতিমী ॥ গুণীজনদের সম্মান জানাতে হয়। গুণীদের জীবনেতিহাস থেকে পথচলার পাথেয় পাওয়া যায়। যে জাতি গুণীজনদের সম্মান দিতে জানে না, সে জাতির মধ্যে গুণীজন জন্মায় না। আধ্যাত্মিক রাজধানী সিলেট জেলার প্রাচীন ও ঐতিহ্যবাহী একটি জনপদ জৈন্তারপুর উপজেলা। যুগে যুগে অসংখ্য জ্ঞানী-গুণী, ওলি-আউলিয়া, পীর-মাশায়েখ ও বিশিষ্টজনের জন্ম হয়েছে এ জনপদে। ইসলামী শিক্ষা বিস্তারেও বৃহত্তর জৈন্তার অবদান অনেক বেশি। ঐতিহ্যবাহী এ জনপদের একজন মহান ব্যক্তিত্ব, প্রবীণ আলিমেদীন, যাঈমুল ক্বওম মাওলানা শাহ হাবিব উল্লাহ শায়খে ভিতরগ্রামী রহ.। ৮ এপ্রিল ১৯২৭ ঈসায়ী, ২৫শে চৈত্র ১৩৩৩ বাংলা মোতাবেক ১৭ই জামাদিউল উখরাহ ১৩৪৬ হিজরীর শুক্রবার এ বসুন্ধরায় জন্মগ্রহণ করেন। ভিতরগ্রামী রহ. এর পিতার নাম হাজী মরহুম শাহ ইসমাইল আলী ও মাতার নাম মরহুমা জরিনা বিবি। তার পূর্বপুরুষ মুর্শিদাবাদ থেকে আগত মরহুম সোনা খাঁ ছিলেন স্বাধীন জৈন্তা রাজ্যের সেনাপতি।
শিক্ষাজীবনে আপন চাচা মাওলানা শাহ ইউসুফ আলীর কাছে কায়দায়ে বোগদাদী-কুরআন শরীফ পাঠ গ্রহণের সাথে খরিলহাট প্রাইমারি স্কুলে প্রাথমিক পড়া-লেখা সম্পন্ন করেন। এরপর ইলমেদীনের অন্বেষায় মদিনাতুল উলূম খরিলহাট জৈন্তাপুর মাদরাসায় ভর্তি হয়ে মিজান জামাত (৮ম) পর্যন্ত অধ্যয়ন করেন। গাছবাড়ী জামিউল উলূম কানাইঘাট মাদরাসায় ভর্তি হয়ে আরো কিছুদিন পড়া লেখা করেন। এরপর এক বছর রামপুর মাদরাসায় পড়া-লেখার পর উচ্চ শিক্ষালাভে বিশ্ববিখ্যাত ইসলামী বিদ্যাপীঠ, দারুল উলূম দেওবন্দ ভারতে ভর্তি হন। শরহে জামী কিতাব থেকে স্টাডি শুরু করে তাকমীল ফিল হাদীস পর্যন্ত দীর্ঘ ৫ বছর অধ্যয়ন করেন । ১৯৫১ ইংরেজিতে তাকমিল ফিল হাদীসের (মাদরাসা শিক্ষার সর্বোচ্চ ক্লাস মাষ্টার্স) ফাইনাল পরীক্ষায় প্রথম বিভাগে উত্তীর্ণ হয়ে অনন্য কৃতিত্বের স্মাক্ষর রাখেন। দারুল উলূম দেওবন্দে ভর্তি হওয়ার কিছুদিনের মধ্যেই শায়খুল ইসলাম মাদানী রহ. এর নেক নজরে পড়ে যান মাওলানা হাবিবুল্লাহ রহ.। তালিম, তারবিয়্যাত, তাযকিয়্যাহ ও বিশেষ করে রাজনীতির দ্বীক্ষা গ্রহন করতে হাবিবুল্লাহ মাদানী রহ. এর একান্ত সান্নিধ্যে থাকতেন। শাইখুল হিন্দ মাহমুদ হাসান রহ. গুটা মুসলিম দুনিয়াকে বৃটিশ বেনিয়াদের কবলমুক্ত করার জন্য গঠন করেছিলেন বিশ্বব্যাপী আন্তর্জাতিক একটি সংগঠন। যার নাম ছিল “মুসলিম র‌্যাডিক্যাল সোস্যালিষ্ট ব্লক” (মুসলমানদের সমাজতান্ত্রিক মৌলিক অধিকার আদায়ের সংগঠন)। সংগঠনটির প্রধান ছিলেন শায়খুল হিন্দ রহ. এবং জিএস ছিলেন মাওলানা উবায়দুল্লাহ সিন্দী রহ.। শায়খুল হিন্দ রহ.’র ইন্তেকালের পর এই সংগঠনের প্রধান হন সায়্যিদ হুসাইন আহমদ মাদানী রহ.। মাদানীর একান্ত আস্থাভাজন হওয়ায় মাদানী রহ. হাবিবুল্লাহকে সংগঠনটির সদস্য করেন। কিছুদিন অতিবাহিত হতে না হতেই মাওলানা হাবিবুল্লাহ‘র যোগ্যতা, দক্ষতায় মুগ্ধ হয়ে এক সভায় শায়খুল ইসলাম মাদানী রহ. তাকে ‘যাঈমুল ক্বওম’ (জাতির সরদার) উপাধিতে ভূষিত করেন। জীবনে যাঈমুল ক্বওম রহ. শায়খুল হিন্দ রাহ’র রাজনৈতিক চিন্তা-চেতনা বাস্তবায়নের চেষ্টা চালান। তখনকার দিনে জমিয়তের রাজনৈতিক কার্যক্রম (বিশেষ কারণে কিছুদিন) নিষিদ্ধ ছিল। কিন্তু ইসলাম, দেশ ও জাতির কল্যাণের কার্যক্রম কি দমিয়ে রাখা যায়? কিছুদিন যেতেই মাওলানা হাবিব উল্লাহ ও ডা. মর্তুজা চৌধুরী চেষ্টায় পূর্ব পাকিস্তানের প্রবীন উলামায়ে কেরাম পরামর্শ করেন জমিয়তের কাজকে পুণরায় চালুর জন্য। সবাইকে সংগঠিত করার চেষ্টা চালালেন। তিনি পাকিস্তান আমলে তথা একটি সুত্রমতে ১৯৬৭ সন থেকে জৈন্তাপুর থানা জমিয়তের সেক্রেটারি ও পরে সভাপতির দায়িত্ব দীর্ঘদিন পালন করেন। বেশ ক’বছর সিলেট জেলা জমিয়তের সহ-সভাপতি ও কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের সদস্য ছিলেন। ২০০৩ সালের ১৭ এপ্রিল তিনি সিলেট জেলা জমিয়তের সভাপতি মনোনীত হন। ২০১১ সালের পর বার্ধক্য জনিত কারণে তিনি সভাপতির পদ থেকে স্বেচ্ছায় ইস্তফা নিলেও জেলা জমিয়তের উপদেষ্টা পদে আসীন ছিলেন ইন্তেকালের পূর্ব পর্যন্ত। আধ্যাত্মিক ময়দানে শায়খুল ইসলাম মাদানী রহ. ইন্তেকালের পর খলীফায়ে মাদানী মাওলানা আব্দুল মতিন চৌধুরী শায়খে ফুলবাড়ি রহ. যাঈমুল ক্বওম মাওলানা শাহ হাবিবুল্লাহ ভিতরগ্রামীকে খেলাফত প্রদান করেন। সবার সাথে ছিল তার নম্র ব্যবহার। কোন দুনিয়াদারকে তোশামুদি করতেন না। অন্যায়ের প্রতি ছিলেন আপোষহীন। তা ছাড়াও তিনি আল্লামা মুশাহিদ বায়মপুরী রহ.’র একান্ত আস্থাভাজন ছিলেন। আল্লামা বায়মপুরী রহ. রচিত রাজনৈতিক কিতাব “ফাতহুল কারীম ফি সিয়াসাতিন নাবিয়্যিল আমীন” কিতাবের সম্পাদনা ও ছাপার কাজে দায়িত্ব পালন করেন যাঈমুল ক্বওম রহ.। শিক্ষকতা জীবনে ১৯৫১ সনে সর্বপ্রথম খরিলহাট মাদরাসায় সদরুল মুদাররীসিন হিসেবে যোগদান করেন। ১৯৭৯ সনে কোনোও কারণে তিনি খরিলহাট থেকে অব্যাহতি নেন। এ সময় তিনি শায়খে কৌড়িয়ার পরামর্শে সিলেট শহরের জামেয়া মাদানিয়া কাজির বাজার মাদ্রাসায় যোগ দেন এবং সেখানে ৩ বছর শিক্ষাসচিবের দায়িত্বও পালন করেন। কাজির বাজার মাদরাসায় থাকাকালীন বিলপার জামে মসজিদের ইমাম ও খতিব ছিলেন। বলা বাহুল্য যে, বর্তমান কাজিরবাজার মাদরাসার জমি সরকারি অনুমোদন লাভের পর তৎকালীন প্রেসিডেন্ট শহীদ জিয়াউর রাহমান মাদরাসার জমি বন্দোবস্তের দলিল সিলেট সার্কিট হাউসে এসে মাওলানা হাবিবুল্লাহ রহ.’র হাতে হস্তান্তর করেন। পরবর্তীতে এলাকাবাসী ও পরিবারের অনুরোধে আবারও খরিলহাট মাদরাসায় যোগদান করে ১৯৯৭ সাল পর্যন্ত মহতামিেেমর দায়িত্ব অত্যান্ত সুচারুভাবে পালন করেন। স্বাধীনতা যুদ্ধে উলামায়ে কেরামের অবদান কোনো অংশে কম নয়। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন যাঈমূল ক্বওম রহ. পাক হানাদারদের নির্যাতন থেকে এলাকাবাসীকে রক্ষায় এগিয়ে আসেন। দেশপ্রেমের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে সর্বাত্মক সহযোগিতা করেছেন তিনি মুক্তিকামী জনতাকে। অসহায় হিন্দুদের আশ্রয় দিয়েছিলেন পরম মমতায়। পাকিস্তানি সৈন্যদের হাতে কয়েকবার আটক হয়েও আল্লাহর অশেষ রাহমতে প্রাণে বেঁচে যান। যাঈমুল ক্বওম মাওলানা হবিবুল্লাহ রহ. দীর্ঘ ৮ মাস ৯ দিন কারাভোগ করেন। জেলখানায় বন্দীদেরকে তিনি কুরআনে কারীমের তা’লীম দিতেন। নামাজ ও মাসনুন দোয়া শিক্ষা দিতেন। জৈন্তা অঞ্চলে যাঈমুল ক্বওম রহ. সর্বপ্রথম বিভিন্ন এলাকায় মাদরাসা প্রতিষ্ঠা শুরু করেন। যাঈমুল ক্বওম রহ. যে সকল মাদরাসা প্রতিষ্ঠা করেন, তার মধ্যে অন্যতম জামেয়া কোরআনীয়া সারিঘাট, রামপ্রসাদ ইসলামিয়া মাদরাসা, দরবস্ত আল মনসূর মাদরাসা, ছাতারখাই কৌমি মাদরাসা, রাওজাতুল ইসলাম চাক্তা কওমী মাদরাসা, মানিকপাড়া এহইয়াউল উলুম মাদরাসা, ভাইটগ্রাম হোসাইনিয়া মাদরাসা, ফাতিমাতুয যুহরা মহিলা মাদরাসা, আহলিয়া কৌমি গর্দনা মাদরাসা। ইন্তেকালের আগ পর্যন্ত এ সকল মাদরাসার সদর অথবা ছরপরস্ত হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন তিনি।
১৯৮৫ ঈসায়ী সনে হযরত যাঈমূল ক্বওম রহ. পবিত্র হজ্ব পালন করেন। হজ্বের সফরে হযরতের উল্লেখযোগ্য সফর সাথী ছিলেন মৌলভী মুসলিম আলী বারইকান্দি ও হাজী ইউসুফ মিয়া ডেমা। ২০০৬ সালে হযরত যাঈমুল ক্বওম রহ. ছেলে স্বেচ্ছাসেবক জমিয়তের সেক্রেটারী মাওলানা ছফিউল্লাহ মাসউদকে নিয়ে পবিত্র রমজান শরীফে ওমরা পালন করেন। ওমরাতে যাওয়ার আগে শরীর দুর্বল ছিল। দীর্ঘদিন থেকে বসে নামাজ আদায় করতেন। আল্লাহপাকের রহমতে ১৬ রমজান তিনি ওমরা পালন করেন। দ্বিতীয় দিন মসজিদে হারামে দীর্ঘ ২০ রাকাত তারাবীহ নামাজ দাড়িয়ে আদায় করলেন। যেন সুস্থ্য সবল একজন যুবক। তারপর মদিনা মনওয়ারায় ইতেকাফ করেন। নাস্তিক-মুরতাদ বিরোধী আন্দোলনেও ভুমিকা রাখেন। দেশের হক্কানী উলামায়ে কেরামের নেতৃত্বে মুরতাদ দাউদ হায়দার, তাসলিমা নাসরিনসহ সকল নাস্তিক মুরতাদ, কাদিয়ানী, শিয়া, ভ্রান্ত মতবাদ বিরোধী যত আন্দোলন হয়েছে সকল আন্দোলন সংগ্রামে যাঈমুল ক্বওম রহ.’র অগ্রণী ভূমিকা রাখতেন। বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য মুরতাদ ভাসানী (যগন্দু দরবস্ত) যখন নিজেকে মুরতাদ ঘোষণা দিল। তখন তিনি জৈন্তার উলামায়ে কেরাম ও এলাকার মুরব্বীয়ানদের সাথে পরামর্শ করে যগন্দুকে তওবার আহ্বান জানান। হযরতের ইন্তেকালের পূর্বে জুমুআর দিন সকাল বেলা ছেলেকে বলতেছেন আমার মাউতের খবর সবাইকে জানিয়েছ কি? এটা নিশ্চয় তাঁর মতো একজন কামিল বুজুর্গের কারামত। এমন কথায় ছেলে কান্নায় ভেংগে পড়লে হযরত বললেন, আল্লাহর ফায়সালায় খুশি থাকতে হয় । দিনের বেলা ছেলে-মেয়ে, আহলিয়া ও পুত্রবধুসহ সবাইকে ডেকে আসিয়ত ও দোয়া করলেন। অবশেষে ৭ ছেলে ও ২ মেয়েসহ অসংখ্য ভক্ত-ছাত্র রেখে ৩ মার্চ ২০১৪ ঈসায়ী, ১লা জুমাদাল উলা ১৪৩৫ হিজরী মোতাবেক ১৯ ফাল্গুন ১৪২০ বাংলা সোমবার মধ্যরাতে সিলেট নগরীর শিবগঞ্জস্থ নিজ বাসায় ইন্তেকাল হয় তার। পরদিন বাদ যোহর জানাজা অনুষ্টিত হয়। জানাজায় ইমামতি করেন হযরতের ছেলে মাওলানা ছফিউল্লাহ মাসউদ। খরিলহাট মাদরাসা সংলগ্ন কবরস্থানে তার দাফন সমাধিস্থ করা হয়। আল্লাহ তায়ালা তাকে জান্নাতবাসী করুন-আমীন।